থাই সরপুঁটি মাছের চাষ

থাই সরপুঁটি মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি বেশ শক্ত প্রকৃতির অধিক ফলনশীল মাছ। প্রতিকূল পরিবেশে কম অক্সিজেনযুক্ত বেশি তাপমাত্রার পানিতেও এই মাছ বেঁচে থাকতে পারে।থাই সরপুঁটি চাষের কিছু সুবিধাজনক দিক রয়েছে। রুই জাতীয় মাছের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে, কম সময়ে ও সহজতর ব্যবস্খাপনায় এই মাছ কাংক্ষিত মাত্রার বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

মিশ্র চাষ পদ্ধতি অর্থাৎ রুইসহ অন্যান্য উন্নত প্রজাতির মাছের সাথেও অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে এই মাছ চাষ করা যায়। ছয় মাসে একটি থাই সরপুঁটির পোনা গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনে উন্নীত হয়ে থাকে। একই পুকুরে বছরে দু’বার এই মাছের চাষ করা যায়।


থাই সরপুঁটি মাছের চাষপদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো। এ মাছ চাষের জন্য পুকুরের আয়তন ৫ থেকে ৩০ শতাংশ হতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলে ক্ষতি নেই। তবে, ১ একরের ঊর্ধ্বে না হলেই ভালো। পুকুরের গভীরতা হতে হবে ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটার অর্থাৎ তিন থেকে চার হাত। পোনা ছাড়ার আগে পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। শুকনো মৌসুমে পুকুরের সম্পূর্ণ পানি নিষ্কাশন করে তলার মাটি ১০-১৫ দিন ধরে রোদে শুকাতে হয়। অত:পর লাঙ্গল দিয়ে কর্ষণ করে নিতে হবে। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী মেরে ফেলার ব্যবস্খা করতে হবে। এই পর্যায়ে পুকুর প্রস্তুতির জন্য প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা একান্তই অপরিহার্য।


চুন প্রয়োগের সাত দিন পর প্রতি শতাংশে ৪ কেজি গোবর, ১৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়।


সার পুকুরের তলার মাটির ওপর ছড়িয়ে দিয়ে কোদালের সাহায্যে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পর যথা শিগগির পুকুর পানি দিয়ে ভরে দেয়া জরুরি। প্রস্তুতকৃত পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রতি শতাংশে ১.৫ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চি সাইজের ৬০-৬৫টি থাই সরপুঁটির পোনা ছাড়া যেতে পারে। পুকুরে যে পরিমাণ মাছ আছে, সে মাছের মোট ওজনের শতকরা চার থেকে ছয় ভাগ হারে চালের কুঁড়া বা গমের ভুসি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন সকাল-বিকেলে দু’বার পুকুরের সর্বত্র ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের গড় ওজন নির্ধারণ করে খাবার পরিমাণ ক্রমেই বাড়াতে হবে। পুকুরে মাছের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতি শতাংশে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ওই পরিমাণ টিএসপি সার প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক।


থাই সরপুঁটি সাধারণত নরম ঘাস পছন্দ করে। তাই এ মাছের জন্য খুদে পানা, টোপা পানা, নেপিয়ার ঘাস, কলাপাতা ইত্যাদি প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ হলেও সরবরাহ করা গেলে আনুপাতিক উৎপাদনও সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে।


ওই প্রক্রিয়ায় পাঁচ-ছয় মাস পালনের পর এক-একটি মাছের ওজন দাঁড়াবে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম। এই সময় মাছ বাজারজাত করার পুরোপুরি উপযোগী হয় এবং সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করা যায়। সুস্বাদু মাছ হিসেবে বাজারে এই মাছের চাহিদাও থাকে প্রচুর।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment