পেরিফাইটন বেইজ্ড মৎস্য চাষ পদ্ধতি

আমিষের সর্বোত্তম উৎস মাছ এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু দিন দিন প্রাকৃতিক জলাশয়ে মৎস্য প্রাচুর্যতা কমে যাওয়ার ফলে ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা মেটাতে পুকুরে মাছ চাষের বিকল্প নেই। আর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করে মৎস্য উৎপাদনের পদ্ধতি হলো পেরিফাইটন বেইজ্ড মৎস্য চাষ। কিভাবে প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করে পুকুরে মাছ চাষে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায় তা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. মো: আবদুল ওহাব। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কৃত্রিম খাদ্য ব্যবহার না করে প্রচলিত চাষের তুলনায় এ পদ্ধতিতে প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

পেরিফাইটন কী? পেরিফাইটন হচ্ছে বিভিন্ন জলজ জীব-অনুজীবের জটিল মিশ্রণ, যারা জলাশয়ের পানিতে অবস্খিত কোনো সাবস্ট্রেটের ওপর লেগে থাকে। এসব জীব-অনুজীবের মধ্যে রয়েছে­ ব্যাকটেরিয়া, এককোষী প্রাণী, ছত্রাক, ফাইটোপ্ল্যাংটন, জুপ্ল্যাংটনসহ বিভিন্ন তলদেশীয় প্রাণী। সাবস্ট্রেটের গায়ে অবস্খানরত এসব অনুজীব মাছ ও চিংড়িজাতীয় প্রাণীর খুবই প্রিয় খাবার।


পেরিফাইটন পদ্ধতিতে কোনো কোনো মাছের প্রজাতি চাষের জন্য উপযুক্ত এ প্রসঙ্গে ড. ওহাব বলেন, সাধারণত যেসব মাছ গ্রেজিং বা চেঁছে খাবার খায় তারা পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য খুবই ভালো। আমাদের দেশী প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউসসহ তেলাপিয়া ও চিংড়ি এ পদ্ধতিতে চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়া সাবস্ট্রেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলাশয়ের পানিতে বাঁশ বা গাছের ডাল প্রভৃতি সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। হিজল ডাল সাবস্ট্রেট হিসেবে খুবই ভালো। তবে বাঁশের কঞ্চি, পাট খড়ি, গ্লাস রড, প্লাসটিক দণ্ডও সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাবস্ট্রেট ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন প্রসঙ্গে ড. ওহাব জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, রুই মাছের মনোকালচারের (এক প্রজাতির চাষ) ক্ষেত্রে যে পুকুরে সাবস্ট্রেট ব্যবহার করা হয়নি সেখানে উৎপাদন পাওয়া গেছে এক হাজার কেজি বা হেক্টর অপর দিকে সাবস্ট্রেট ব্যবহার করা পুকুরে একই মাছের উৎপাদন পাওয়া গেছে প্রায় ১৯০০ কেজি বা হেক্টর, যা কিনা প্রায় দ্বিগুণের সমান। অন্য দিকে পলিকালচার বা মিশ্র চাষের (একই সাথে একাধিক প্রজাতির চাষ) ক্ষেত্রে সাবস্ট্রেট ব্যবহার করে তথা পেরিফাইটন পদ্ধতিতে প্রায় তিন গুণ উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। তবে রুই-কাতলা মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে, রুই ৬০ শতাংশ ও কাতলা ৪০ শতাংশ হওয়া ভালো। এ ছাড়া তেলাপিয়া-চিংড়ি মিশ্রচাষেও ভালো উৎপাদন পাওয়া গেছে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, আমাদের দেশে সাধারণত গৃহস্খালি পুকুরগুলো এমনিতেই ফেলে রাখা হয়, সেখানে মাছ ছাড়া হলেও মাছের বৃদ্ধি হয় খুবই কম। এ ক্ষেত্রে সেখানে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে তথা সাবস্ট্রেট ব্যবহার করে সহজেই মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment